লিউকোরিয়া' বা 'সাদা স্রাব' শব্দটা মোটামুটি সব মেয়ের কাছেই কম বেশি পরিচিত। মেয়েদের ভ্যাজাইনা বা যোনি পথ থেকে যে ঘন, সাদাটে বা সাদাটে হলুদ,গন্ধযুক্ত পদার্থের নিঃসরণ হয় তাকেই বলা হয় লিউকোরিয়ায়। মেয়েদের শরীরের এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের অসামঞ্জস্য বা গরমিলের কারনে অনেক সময় সাদা স্রাব হলেও এটি কোনো বড় ধরনের রোগ নয়,রোগের পূর্ব সর্তকতা বলা যায় বা উপসর্গ । তবে অনেক ক্ষেত্রে এটিও অস্বাভাবিক রূপ নিতে পারে আমাদের অসবাধনতা আর উদাসিনতার কারনে। বিভিন্ন কারনে মেয়েদের সাদা স্রাব হতে পারে। প্রথমেই এটিকে রোগ হিসেবে ধরা যাবেনা। মেডিকেলের ভাষায় এটি ফিজিওলজিক্যালে অবস্থান বা সাধারণ অবস্থা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এর নির্দিষ্ট কারন না থাকলেও কিছু উল্লেখযোগ্য কারনে লিউকোরিয়া হয়ে থাকে।
* মূলত মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক শুরু হবার আগে ও পরে কয়েকদিন কোন সমস্যা ছাড়া সামান্য সাদা স্রাব স্বাভাবিকভাবেই নির্গত হতে পারে।এটি নরমাল একটা বিষয়।
* জন্মবিরতিকরণ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে সাদাস্রাব হতে পারে।
* গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে সাদাস্রাব হতে পারে।
* আমাদের দেশের গরম আবহাওয়ায় অনেক সময় অধিক ক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে, সাদাস্রাব হতে পারে।
এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়ে বাচ্চা জন্মের পর ১ থেকে ১০দিনের মধ্যে কোন কারণ ছাড়াই যোনিপথে সাদাস্রাব নির্গত হতে পারে এবং তা ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই আবার ঠিক হয়ে যেতে পারে।
উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও, দুর্বল স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, ভিটামিন, প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের অভাব, রক্তশূন্যতা, কিডনির অসুখ, যক্ষ্মা, বিষণ্ণতা ইত্যাদি কারণেও লিউকোরিয়া হতে পারে। জীবাণুজনিত বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে লিউকোরিয়া হতে পারে। ট্রাইকোমানাল ভ্যাজাইনালিস, ক্যানডিডা এলবিকানস, নাইসেরিয়া গনোরি (গনোরিয়ার জীবাণু) ইত্যাদি জীবাণু এ জাতীয় লিউকোরিয়ার কারণ হতে পারে। আবার ডায়াবেটিস, অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘকালীন ব্যবহার, মেনোপজ এসব জীবাণুর সংক্রমণ ও প্রকোপ বাড়ায়। আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারন হতে পারে,
অস্বাস্থ্যকর অবস্থান,জেনেটিক ট্র্যাক্টের সংক্রমণ বা অনাক্রম্য ইমিউন ফাংশন।
অস্বাস্থ্যকর অবস্থান,জেনেটিক ট্র্যাক্টের সংক্রমণ বা অনাক্রম্য ইমিউন ফাংশন।
কখন বুঝবো লিউকোরিয়া অস্বাভাবিক রূপ নিচ্ছে?
লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব সাধারণ ঘন,সাদাটে অথবা সাদাটে হলুদাভ হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে লিউকোরিয়াকে নরমাল অবস্থান হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন তা গাড়ো হলুদ,হলুদ থেকে খয়েরি কালারের হতে থাকে,লিউকোরিয়া বের হওয়ার পরিমাণও বাড়তে থাকে এবং সাথে সাথে বাজে গন্ধ হতে শুরু করে তখন বুঝতে হবে এটি আর স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
নিরাময়ের সাধারণ উপায় : লিউকোরিয়া থেকে নিরাময়ে বা সাদা স্রাব নিঃসরণের পরিমান আমরা অনেকাংশেই কমিয়ে আনতে পারি কিছু সাধারণ নিয়ম কানুন মেনে চলে-
* প্রথমত অবশ্যই ভ্যাজাইনা এবং তার আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে সব সময়। এক্ষেত্রে পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। মাঝে মাঝে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছতে হবে।
* নিয়মিত শাক সবজি, ফল মূল ও পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং বিশ্রাম করতে হবে।
* ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া জনিত হলে সে অনুযায়ী পথ্য সেবন করতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
* লিউকোরিয়া খয়েরি বর্নের আর অতি দুর্গন্ধ যুক্ত হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
No comments:
Post a Comment