ভারতে অবস্থিত আগ্রার তাজমহল দেখার ইচ্চা অনেকের থাকলেও সবার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে আগ্রার তাজমহল আপনি কিন্তু বাংলাদেশে দেখতে পারেন। ভ্রমণপিপাসু মানুষের দৃষ্টির পরিতৃপ্তির জন্য বাংলার ইতিহাসের প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ের নির্মিত হয়েছে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে বাংলার তাজমহল।
প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে পৃথিবীতে নির্মিত অতি আশ্চর্যের সাতটি জিনিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মিসরের রাজা বাদশাহদের মমি ও ভারতের মোগল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ বেগমের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত আগ্রার তাজমহল। মমি আর তাজমহলের আদলে এ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা আহসানউল্লাহ মনি নিজ গ্রাম পেরাবতে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১০ মাইল পূর্বে পেরাব, সোনারগাঁয়ে অবস্থিত। এটি প্রকৃত তাজমহলের (ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি মুঘল নিদর্শন) একটি হুবহু নকল বা রেপ্লিকা। এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং তথ্যানুসারে এটি তৈরি করতে মাত্র ৫ বছর এবং USD ৫৮ মিলিয়ন খরচ হয়েছে।
বাংলার তাজমহল: সম্রাট শাহজাহানের অনুপম ভালোবাসার নিদর্শন আগ্রার তাজমহল। ভালোবাসার অমর নায়ক হিসেবে মধ্যযুগে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি স্থাপনা রচিত হয়েছিল তার হাত দিয়ে। স্ত্রী মমতাজের ভালোবাসায় সিক্ত সম্রাট ভালোবাসার পিয়াসুদের কাছে আজও অমর।
যাদের সাধ্য নেই ভারতে গিয়ে আগ্রার তাজমহল দেখার অথচ মনের কোণে ইচ্ছা লুকিয়ে আছে, তাদের মনের ইচ্ছা কিছুটা হলেও লাঘব হবে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের অন্তর্গত জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে নির্মিত বাংলার তাজমহল দেখে।
২০০৩ সালে এর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেশ ঘটা করে এর উদ্বোধন করা হয়। সুলতানি আমলের প্রসিদ্ধ সুলতান গিয়াসউদ্দীন আযম শাহ আর বারো ভূঁইয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর ঈশা খাঁর রাজধানীখ্যাত সোনারগাঁয়ের এ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বাংলার তাজমহল এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। তাজমহল সংশ্লিষ্ট জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৮ বিঘা। তবে আশপাশে পর্যটনের জন্য প্রায় ৫২ বিঘা জায়গা সংরক্ষিত রয়েছে।
বাংলার তাজমহল আগ্রার তাজমহলের মডেলেই গড়া হয়েছে। তাজমহলের মূল ভবনে স্বচ্ছ ও দামি পাথরে মোড়ানো। এর অভ্যন্তরে আহসানউল্লাহ্ মনি ও তার স্ত্রী রাজিয়া দুজনের সমাধির স্থান রক্ষিত আছে। চার কোণে চারটি বড় মিনার, মাঝখানে মূল ভবন, সম্পূর্ণ টাইলস করা। সামনে পানির ফোয়ারা, চারদিকে ফুলের বাগান, দুই পাশে দর্শনার্থীর বসার স্থান।
এখানে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাজমনি ফিল্ম সিটি, রেস্তোরাঁ, উন্নতমানের খাবার-দাবারের পাশাপাশি, যারা গ্রুপে বা পিকনিকে আসতে চান তাদের জন্য ও ব্যবস্থা রয়েছে। আরো রয়েছে রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও। ইচ্ছা করলে যে কোনো দর্শনার্থী এখানে ছবি উঠাতে পারবেন। তাজমহলকে ঘিরে বাইরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন হস্তশিল্পসামগ্রী জামদানি শাড়ি, মাটির গহনাসহ আরও অন্য পণ্য
যেভাবে তাজমহলে যাওয়া যাবে: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মদনপুর দিয়ে, এশিয়ান হাইওয়ে থেকে প্রায় ২-৩ কিমি. ভেতরে অথবা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর হয়ে রূপগঞ্জের বরপা দিয়েও যাওয়া যেতে পারে। অথবা কুড়িল বিশ্বরোড দিয়ে গাউছিয়া হয়েও যাওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment